সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৪ বছর পর ‘ভুলভুলাইয়া’র ছবিতে অক্ষয় কুমার ‘কিশোর গ্যাং নির্মূলে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েছে র‌্যাব’ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানোর পর থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ বিরোধী দল নিধনে এখনো বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল রাজশাহীর দুই জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ, ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিছিন্ন তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা
জাপানের ‘সূর্যডিম’ আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও

জাপানের ‘সূর্যডিম’ আলো ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও

স্বদেশ ডেস্ক:

বিশ্বের সবচেয়ে দামি, সুস্বাদু ও মিষ্টি আমের নাম মিয়াজাকি বা ‘সূর্যডিম’। অবশ্য বিশ্ববাজারে ‘রেড ম্যাংগো’ কিংবা ‘এগ অব দ্য সান’ নামে পরিচিত। অন্যসব আমের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় এর বাজারদামও অনেক বেশি। বিশ্ববাজারে একটি মিয়াজাকি আমের দাম প্রায় ৭০ ডলার বা ৬ হাজার টাকা। আর একেকটি আমের গড় ওজন হয় ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। অর্থাৎ প্রতি ১০ গ্রাম সূর্যডিম আমের দাম ১ ডলারের মতো।

বর্তমানে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে সূর্যডিম আমের চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছে। ৭৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃবাগান হিসেবে রোপণ করার প্রায় চার বছর পর এসব গাছে আম এসেছে। এর মধ্যে রাজধানীর আসাদগেট, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও গাজীপুরের নুরবাগের হর্টিকালচার সেন্টারে ফল এসেছে এবং পাকতে শুরু করেছে। বাজারদর বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকও নতুন এ জাতের আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জাপানের মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম চাষের একটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। আগামী দিনে আমাদের হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে এসব আমগাছ সারাদেশে কৃষকপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘সূর্যডিম আমটি দেখতে অনেক সুন্দর। পাকলে লাল রঙ হয় এবং পাকার আগে রঙ থাকে গোলাপি। আমটি খেতেও অনেক সুমিষ্টি। জাপানে এই আম গ্রিনহাউসের মধ্যে চাষ করা হয়। সে দেশের বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠানে অতিথিদের এই আম দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘সূর্যডিম আমের সম্প্রসারণ নিয়ে আমরা কাজ করছি। হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে এটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০১৬ সালে থাইল্যান্ড থেকে আমরা এগ অব দ্য সান বা সূর্যডিম আমের কিছু আঁটি দেশে এনেছিলাম। পরে সেগুলোকে ৭৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠানো হয়। তার পর আঁটি থেকে হওয়া গাছগুলোকে মাতৃবাগান হিসেবে রোপণ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘সূর্যডিম আমের চাষ সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ্যে এক হাজার গাছের কলম করা হচ্ছে, তা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। যারা ছাদবাগান করছেন, তাদেরও এই আমগাছ লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহী করা হচ্ছে। তবে এখনো কলম বিক্রির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা কৃষকপর্যায়ে এই আমের চারা বিতরণ করতে পারব বলে আশা রাখছি। সে ক্ষেত্রে সূর্যডিম আমের চারার দাম ১০০ টাকার বেশি হবে না, এটি আমি বলতে পারি।’

ফল ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘ঠিকমতো চারাগুলো যত্ন করার কারণে দুই বছরের মাথায় অর্ধেক গাছে আম ধরেছে। একেকটি গাছে আপাতত পাঁচ-সাতটি করে আম ধরেছে। তবে আমরা এখনো এই আমের গড় উৎপাদন সেভাবে ঠিক করতে পারিনি। একটি গাছে পরিপূর্ণভাবে এই আম আসতে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লেগে যায়। আমের গড় ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

অন্যদিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকার কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরীও প্রথম সূর্যডিম আম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনি ২০১৭ সালে প্রথম এই আমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। এখন তার বাগানে ১২০টি গাছে আম ধরেছে। এ ছাড়া খুলনার ডুমুরিয়া ও রাজধানীর কিছু ছাদে ব্যক্তি উদ্যোগে সূর্যডিম আমের চাষ করেছেন। আমচাষি হ্ল্যাশিমং চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০১৬ সালে আমি সূর্যডিম আমের জাতটি ভারত থেকে নিয়ে আসি। তার পর ২০১৭ সালে চারা রোপণ করি। প্রথমে আমার কাছে ১৫-২০টি গাছ ছিল। সেই গাছগুলো থেকে আমি চারা তৈরি করে বাগান করি। ২০১৯ সাল থেকে আমার গাছে আম আসতে শুরু করে। তিন বছর ধরে আম পাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি ২০১৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যডিম জাতের আমের চাষ শুরু করি। বাগান শুরুর প্রথম থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সার ও পরিচর্চার বিষয়ে সহযোগিতা পাই। এ ছাড়া কৃষি গবেষণা থেকে বিভিন্ন সময়ে চাষের বিষয়ে পরামর্শ পেয়েছি।’

একটি গাছে কেমন আম আসে জানতে চাইলে হ্ল্যাশিমং চৌধুরী বলেন, ‘একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০টি আম ধরে। তিনটি আমে এক কেজি ওজন হয়। তবে এ বছর আবহাওয়া একটু গরম থাকায় কিছুটা ফলন কম হয়েছে। তাও ২০ থেকে ২৫টি করে আম ধরেছে। সূর্যডিম আম সাধারণত মে মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখে পাকা শুরু হয় এবং জুনের ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর গরমের কারণে ১৫ মে থেকেই আম পাকা শুরু হয়েছে।’ দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমি তেমন দাম পাইনি। আমটি সম্পর্কে মানুষ জানার পর এ বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনেই অর্ডার পাচ্ছি। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। তবে সরকার যদি আমটি বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দেয়, তা হলে প্রতি কেজি আমের দাম পাব ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশে সূর্যডিম আমের জাতকে ছড়িয়ে দিতে আমি এ বছর থেকে চারা তৈরি করছি। আগামী বছর থেকে তা পাওয়া যাবে। তবে দামটা এখনো ঠিক করিনি। খরচ হিসাব করে চারার দামটা ঠিক করব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877